সুপার গুলু আবিষ্কার কিভাবে হয়েছিল? এর আসল কাহিনী ?

 দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন, সারা পৃথিবী ছিল অস্ত্র প্রতিযোগিতা এবং উন্নত অস্ত্র তৈরি করার প্রতিযোগিতায়। তবে, এই সময়েই কিছু অদেখা কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার ঘটেছিল, যেগুলি ইতিহাসের পাতায় জায়গা করে নিয়েছে। তেমন একটি আবিষ্কার হলো সুপার গ্লু, যা আজকাল প্রতিদিনের জীবনযাত্রায় অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি উপকরণ।



সুপার গ্লুর জন্ম

হ্যারি কুভার (Harry Coover) ছিলেন একজন আমেরিকান রসায়নবিদ, যিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে কাজ করছিলেন। তাঁর কাজ ছিল বড় ধরনের বিস্ফোরক বা অস্ত্র তৈরি করা নয়, বরং তিনি একটি গান সাইট তৈরি করার কাজে নিযুক্ত ছিলেন।

গান সাইট হলো একটি কাচ বা প্লাস্টিকের তৈরি ছোট বস্তু, যা বন্দুকের নলের উপরের দিকে লাগানো থাকে। এর মধ্যে একটি বৃত্ত থাকে, যার মাঝে একটি ক্রস থাকে। এই ক্রসের মাধ্যমে বন্দুকবাজ তার লক্ষ্য নির্ধারণ করেন। কুভার এই প্রযুক্তি তৈরি করার চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু ৯ বছর পরেও সফল হননি।

সুপার গ্লুর দুর্ঘটনাজনিত আবিষ্কার

১৯৫১ সালে কুভার আরেকটি নতুন কাজের দায়িত্ব পান। তিনি ইস্টম্যান কোডাক কোম্পানিতে যোগ দেন। সেখানে তাঁকে একটি জেট বিমান এর ককপিটের জন্য এমন একটি প্লাস্টিক তৈরি করার কাজ দেওয়া হয়, যা তাপ সহ্য করতে সক্ষম হবে। যেহেতু জেট বিমান খুব দ্রুত চলে, ফলে বাতাসের সংঘর্ষে প্রচুর তাপ সৃষ্টি হয়, যা ককপিটে আগুন লাগানোর ঝুঁকি সৃষ্টি করে। কুভার এবং তাঁর সহযোগী ফ্রেড জায়নার গবেষণা শুরু করেন অ্যাক্রিলেট পলিমার নামক প্লাস্টিক তৈরি করতে।

গবেষণার মধ্যে আবার, কুভার সেসময়ের পুরনো একটি শক্তিশালী আঠালো তরল আবিষ্কার করেন, যা তিনি আগে একবার তৈরি করেছিলেন, কিন্তু তখন তাকে গুরুত্ব দেননি। এবার তিনি এই তরলটির শক্তি পরীক্ষা করতে শুরু করেন। তিনি দুটো প্রিজম (কাচের টুকরো) একে অপরের সাথে এই আঠালোর সাহায্যে আটকিয়ে দেন এবং দেখতে পান, তাদের আলাদা করা যায় না।

কুভারের নতুন আবিষ্কার এবং সুপার গ্লু

এই আবিষ্কারের পর কুভার আরেকটি বড় সিদ্ধান্ত নেন। তিনি এই আঠালো তরলটিকে বাণিজ্যিকভাবে বাজারে নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নেন। তার প্রতিষ্ঠান ইস্টম্যান কোডাকও তাকে পূর্ণ সহযোগিতা দেয়। ১৯৫৮ সালে, ইস্টম্যান ৯১০ নামে এই নতুন আঠালোর একটি পণ্য বাজারে আসে, যা ইতিহাসে প্রথম সুপার গ্লু নামে পরিচিতি পায়।

উপসংহার

সুপার গ্লু হল একটি চমকপ্রদ উদাহরণ কিভাবে একটি ভুল বা দুর্ঘটনা হতে পারে এক বিশাল আবিষ্কারের সূত্রপাত। এটি একদিকে যেমন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ এর সময়কার আবিষ্কার, তেমনি অন্যদিকে এটি আজকের দিনের জীবনে এক অপরিহার্য জিনিস হয়ে উঠেছে। এটি শুধু যে ব্যক্তিগত জীবনে কাজ আসে তা নয়, শিল্প ও বিভিন্ন পেশায়ও এর ব্যবহার খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

আপনি যখন কিছু ভাঙা জিনিস মেরামত করেন, অথবা শিল্পকর্ম তৈরি করেন, বা পেশাগত কাজের জন্য ব্যবহার করেন—সুপার গ্লু আজকাল সকলের কাছে অপরিহার্য হয়ে উঠেছে।


সুপার গ্লু, হ্যারি কুভার, ইস্টম্যান কোডাক, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, গান সাইট, আঠালো তরল, অ্যাক্রিলেট পলিমার, শক্তিশালী আঠাল, বাণিজ্যিক আঠালো, সেরা আঠালো, উদ্ভাবন, প্রযুক্তির আবিষ্কার, গ্লু ইতিহাস, শিল্প গ্লু, গ্লু ব্যবহার, #সুপারগ্লু, #হ্যরীকুভার, #ইস্টম্যানকোডাক, #দ্বিতীয়বিশ্বযুদ্ধ, #আঠালো, #শক্তিশালীআঠাল, #অ্যাক্রিলেটপলিমার, #গ্লুরইতিহাস, #উদ্ভাবন, #তাপপ্রতিরোধী, #দ্রুতগতিজেট, #গ্লু ব্যবহার, #জীবনযাত্রা, #টেকনোলজি

মন্তব্যসমূহ